রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে মানতে রাজি নয় সরকার

373

জাতিসঙ্ঘের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) – ২০১৯ এ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ‘শরণার্থী’ হিসাবে আখ্যায়িত করায় তাতে আপত্তি জানিয়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তার জন্য জেআরপি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের অধিবাসী’ হিসাবে চিহ্নিত করে সরকার।

387591_187

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্য তৈরি করা জেআরপিতে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিষয়টি নজরে এলে ‘শরণার্থী’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত আশ্রয়দানকারী দেশ কার মর্যাদা কী হবে তা ঘোষণা না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আগ বাড়িয়ে কেউ তাদের মর্যাদা ঘোষণা করতে পারে না। আর ঢাকা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের অধিবাসী’ হিসেবেই বিবেচনা করে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এদের জন্য চাহিদা মোতাবেক সহায়তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। গত কয়েকটি জেআরপি দেখলেই তা বোঝা যায়।

নতুন জেআরপিতে চলতি বছর রোহিঙ্গা ও উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ৯২ কোটি পাঁট লাখ মার্কিন ডলার চাহিদা প্রাক্কলন করেছে জাতিসঙ্ঘ। আগের জেআরপির মতো এবারও খাদ্যনিরাপত্তায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

গণহত্যার হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করেছে বাংলাদেশ 

বাংলাদেশ গণহত্যার হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করেছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, অন্যথায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এটি হত সবচেয়ে বড় গণহত্যা, যা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের জন্য অপমানজনক ও মর্যাদাহানীকর হত।

গতকাল হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে মানবাধিকার বিষয়ক একটি সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো।

ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। তাই বিপুল ভোটে বাংলাদেশ আবারো জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় আশ্বর্য হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইনে ফেরত পাঠানো প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করে মিয়ানমার মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট মিয়ানমার সৃষ্টি করেছে, আর এর সুরাহা তাদেরই করতে হবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে সঙ্কটের সমাধান মিয়ানমারে খুঁজতে হবে, বাংলাদেশে নয়। এই গভীর সঙ্কট থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কট চলতে থাকলে জঙ্গিবাদ উৎসাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ড. মোমেন বলেন, আর তা কেবল মিয়ানমার বা বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকীর কারণে হয়ে দাড়াবে।

পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকের ধারণা দূর্বল। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসঙ্ঘে দিয়েছিলেন। মিয়ানমারের আস্থাভাজন চীন, ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের তত্ত্বাবধানে এই নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।


Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.