মাধ্যমে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবদান ও ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল ও সমুন্নত হয়েছে।রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মুসলিম বিশ্বসহ সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন কার্যালয়ের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
এবারে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারন অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সম্মেলন এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন মিয়ানমারের জাতিগত নিধন অভিযানে হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা প্রতিদিন প্রাণভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত তিন সপ্তাহে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে যাদের বেশির ভাগই মহিলা, শিশু এবং বয়স্ক। এর আগে থেকেই চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ছিল।ফলে বর্তমান মোট আট লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এদের খাদ্য বাসস্থান এবং জরুরি সাহায্য সংকুলান এবং এদের স্বদশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ জটিল সংকটের মুখোমুখি। এ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমস্যা তুলে ধরা ও এর সমাধানে বিশ্ববাসীর সহযোগিতা নিশ্চিত করা ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তাঁর সরকারের সাফল্যের এবং জাতিসংঘে তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন।আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধির কথাও তিনি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী এবং স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জোরপূর্বক বিতাড়িত ৮ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান নৃশংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থার ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। এই নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আন্তর্জাতিক আভিবাসন সংস্থার তথ্যমতে গত তিন সপ্তাহে চার লাখ ত্রিশ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া ঠেকানোর জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমানা বরাবর স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। এতে আমরা ভীষণভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এ সব মানুষ যাতে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন এখনই তার ব্যবস্থা সুষ্ঠ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য আহবান জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি সব ধরণের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের নিন্দা জানান। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি মেনে চলছে। তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা বন্ধে এবং ঐ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করায় আমি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ও জাতিসংঘের মহাসচিবসহ রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাই।
গত ১৮ থেকে ২১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনের বিভিন্ন বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দে্ন।প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্য শেষে প্রবাসী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে সফরসঙ্গী পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, নিউ ইয়র্ক ও ঢাকার প্রিন্ট ইলেক্ট্রোনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।