লস এঞ্জেলেসে শহীদ জিয়া’র ৩৫তম শাহাদাৎবার্ষিকী পালিত
নিউজবিডিইউএস ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের মেগাসিটি লস এঞ্জেলেসে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৩০শে মে, সোমবার সন্ধ্যায়, ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি’র উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি’র সভাপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক জনাব মো. আ. বাছিত। স্হানীয় বিএনপি’র নেতৃবৃন্দরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীরা এদিন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, আধুনিক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) ৩৫তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি আয়োজিত এ আলোচনা সভার শুরুতেই অতিথিদের জন্য বড় পর্দায় হাই-ডিফিনেশন প্রজেক্টরের মাধ্যমে “শহীদ জিয়া: জীবন ও কর্ম” শীর্ষক একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র পরিবেশন করা হয়। প্রায় চল্লিশ মিনিটের এই প্রামাণ্য ভিডিওটিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী, ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার, তাঁর আদর্শ, দেশপ্রেম, বীরত্ব, দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে নেতৃত্বের সফলতাসমূহ এবং দেশ গড়ার ক্ষেত্রে শহীদ জিয়ার জনপ্রিয় উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। প্রামাণ্য ভিডিওটি তৈরী করেছেন ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি’র তরুন নেতা ও দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ খান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই এই ভিডিওটি তৈরী করা হয়েছে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ জিয়াকে দেখিনি, আমদেরকে সত্যি ইতিহাসটা জানতে ও বুঝতে হবে।’
শহীদ জিয়া’র ৩৫তম শাহাদাৎবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু। মূল আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। এই ক্ষণজন্মা পুরুষই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। যাদের নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল, তারা সেদিন আত্নগোপনে কিংবা আত্নসমর্পন করেছিলেন। সারা পৃথিবী জানে শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ক্ষমতায় এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে আওয়ামী লীগের বন্ধ করে দেয়া গণতন্ত্র আবারও চালু করেন। গুম, খুন আর জুলুম-নির্যাতন করে এই অবৈধ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার আর বেশী ক্ষমতায় দিন টিকে থাকতে পারবে না। জনরোষে পড়ে তাদের বিদায় নিতেই হবে। শেখ মুজিব দেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বাধিকার। তিনি সেনাবহিনীকে বিশ্বাস করতেন না। তাই রক্ষীবাহিনী তৈরি করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেন। শেখ হাসিনা তারই কন্যা। বাকশালের রক্ত তার শরীরেও রয়েছে। তাই ভিন্ন মত পোষণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে আবার সেই একদলীয় শাসনের দিকে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে।
ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি’র সভাপতি মো. আ. বাছিত বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শহীদ জিয়ার বিভিন্ন স্মৃতিমুলক চিহৃ বহাল থাকলেও বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকার বিভিন্ন জায়গায় জিয়ার নাম ও রাজনীতিতে বিএনপি’র নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন ক্ষমতায় থাকার জন্য অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ কে বিক্রি করে দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না। এই ভোট ও ভোটারবিহীন অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে একেরপর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে যাচ্ছে। তিনি আরোও বলেন সে দিন বেশী দুরে নয়, যেদিন এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটবে। তিনি নেতাকর্মীদেরকে শত-প্রতিকূলতার মাঝেও বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মুর্শেদুল ইসলাম বলেন, জিয়াউর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আদর্শকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। আর এখন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে নির্বাসন দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র অত্যন্ত পরিকল্পিত। সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।দেশে এখন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে বর্তমান অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর বিকল্প নেই দেশে গণতন্ত্র নেই। যত দিন যাচ্ছে এই সরকারের নোংড়া রাজনীতি সম্পর্কে জনগণ ততই স্পষ্ট ধারণা লাভ করছে ।
বিএনপি নেতারা বলেন, বর্তমান অবৈধ আওয়ামী সরকার চারদিকে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতেই একের পর এক বিভিন্ন ঘটনার সৃষ্টি করে চলেছে। তারা অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ থেকে হাজার কোটি টাকা চুরির ঘটনা ও বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকের লুটপাটের ও হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগের সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক লাঞ্ছনা, বান্দরবানে ভিক্ষু হত্যা, কুমিল্লা সেনানিবাসে তনু ধর্ষণ ও হত্যা, বাঁশখালিতে সাধারন গ্রামবাসীদের পুলিশ কর্তৃক গুলি করে হত্যা, সকল ব্লগার হত্যা, পুলিশ কর্তৃক ঢাকায় চায়ের দোকানীকে আগুনে পুঁড়িয়ে হত্যা, রেলওয়ের কালো বিড়ালের বিচার, শেয়ার মার্কেট লুটপাটের ঘটনা, বিডিআর হত্যা, হেফাজতের সমাবেশে হত্যা, শিশুর পায়ের আওয়ামী এমপির গুলিবর্ষণ, গর্ভের শিশুর উপর ছাত্রলীগের গুলি, সারাদেশে ইউপি নির্বাচনের নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা সহ নানা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সুবিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
আলোচনা পর্বের পরপরই বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং বাংলাদেশে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বপ্নপুরুষ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের জন্য এক বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন ক্বারী মো. খসরুজ্জামান। সবশেষে, আগত অতিথিদের নৈশভোজের মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাৎবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি’র সিনিয়র নেতা সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী কাঞ্চন, সিনিয়র কম্যুনিটি লিডার ড. মাহবুব খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুর্শেদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান শাহীন, সামসুজ্জোহা বাবলু, জুনেল আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বদরুল এ চৌধুরী শিপলু, এম ওয়াহিদ রহমান, ফারুক হাওলাদার, শাহাদাত শাহীন, মুসলিম উম্মাহর আশরাফ হোসেন আকবর, সাংবাদিক আবদুস সামাদ, শাহীন হক, মোয়াজ্জেম রাসেল, সৈয়দ নাসিরউদ্দিন জেবুল, লায়েক আহমেদ, মারুফ খান, মিকায়েল খান রাসেল, শামসুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, মো. মমিন, মানিক চৌধুরী, হীরা, রানা, তানভীর, ইমন সহ আরও অনেকে।