শপথ অনুষ্ঠানে যাননি রওশন-ইনু, গম্ভীর ছিলেন মেননরা

600

শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের। সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনের জনাকীর্ণ দরবার হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রিপরিষদের ৪৭ সদস্যের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

Gonobhaban_home

বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি। এ সময় রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন। এরপর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান কিছুক্ষণ একান্ত আলাপ করেন।

চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর প্রথমে শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এরপর বঙ্গবন্ধুর এই দুই কন্যা পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুকে জড়িয়ে নেন, গালে চুমু খান। পরে হাত নেড়ে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসন গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।

অবশ্য বঙ্গভবনে ঢোকার জন্য দুপুরের পর থেকেই ভিড় জমেছিল। প্রায় হাজার খানেক অতিথি শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তাদের অনেকেই আসায় শপথ অনুষ্ঠান শুরুর বেশ আগে দরবার হল পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

আগতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা, তাদের শরিক দল এবং সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতার সংখ্যাই বেশি ছিল। আর ছিলেন সামরিক-বেসামরিক আমলা ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। আগেভাগে এসে সবাই একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, মেতে ওঠেন হাস্যরসে।

নতুন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পা ছুঁয়ে সালাম করতে দেখা যায়। আগের সরকারের মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নুরুল ইসলাম নাহিদ, শামসুর রহমান শরীফের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে দোয়া চান নতুন অনেকে।

 দরবার হলের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়াও তার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক স্ত্রী পেপপিকে নিয়ে এসেছিলেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি এবং শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলও ছিলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সিইসি কেএম নূরুল হুদাকেও দেখা গেছে নতুন সরকারের অভিষেক অনুষ্ঠানে।

তবে একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসার সিদ্ধান্ত নেয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বা তার স্ত্রী গত সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে শপথ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।

অসুস্থতার কারণে এরশাদ সিএমএইচে থাকায়, আসেননি বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। তবে রওশন এরশাদসহ জাতীয় পার্টির প্রথম সারির কোনো নেতার না যাওয়ার বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেননি। অবশ্য শপথ অনুষ্ঠানে একমাত্র নেতা হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামকে দেখা গেছে।

মহাজোটের শরিকদের মধ্যে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি, চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন শপথ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।

নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়া আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতাদের মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী তোফায়েল আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, কামরুল ইসলাম, শামসুর রহমান শরীফ, গত সরকারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা এইচটি ইমাম, তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, গওহর রিজভী শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন।

বঙ্গভবনের দরবার হলে হালকা আকাশি রঙের শাড়ি পরিহিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আস্থাশীল ও উজ্জীবিত মনে হচ্ছিল বলে খবর দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা বাসস।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরবার হলে প্রবেশ করার সময় সবাই দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানান। এর কিছু সময় পরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দরবার হলে প্রবেশ করেন।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে পদের জন্য শপথ নেন, পরে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার শপথ নেন। এরপরই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীরা শপথ নেন।

নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবন থেকে ফেরার সময় রাস্তার দু’পাশে সমবেত জনতা তাকে একনজর দেখার জন্য রাজধানীর রাজউক এভিনিউ ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে ছিল বলেও উল্লেখ করেছে বাসস।

শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিতি বিষয়ে বিবিস বাংলা খবর দিয়েছে, আওয়ামী লীগের যে সিনিয়র নেতারা এবার মন্ত্রিসভায় ডাক পাননি, তাদের অনেককেই দেখা গেছে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে। সামনের কাতারেই বসেছিলেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ। ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এম মুহিত। তাদের অনেকেই ছিলেন বেশ গুরুগম্ভীর।

এই প্রতিবেদনেও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ, তার স্ত্রী রওশন এরশাদসহ দলটির প্রথমসারির কোনো নেতা উপস্থিত ছিল না বলা হয়েছে। দেখা যায়নি বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো নেতাকেও।

বিবিসি বাংলা’র খবরে আরও বলা হয়, মহাজোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাম্যাবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া এবং জাসদের শিরিন আখতারকে শপথ অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। তবে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে দেখা যায়নি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.