শপথ নিয়েই কাজে, সবখাত সংস্কার চান অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথের পরই কাজে নেমে পড়েছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে বঙ্গভবনে শপথ নেন তিনি। আর রাতেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে যান।
এ সময় মন্ত্রীকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা, এনবিআর, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পুঁজিবাজার, বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা সংবর্ধনা জানান।
মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতে সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে বলছি— লংটার্ম লোনের জন্য এলে নিষেধ করবেন। বলবেন, পুঁজিবাজারে যাও। ব্যাংক শর্টটার্ম ইনভেস্টমেন্টে বিনিয়োগ করবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে নন ফারমিং লোন প্রায় ১৩ শতাংশ। এটা অনেক বেশি। এর পরিমাণ ৭ শতাংশ হওয়া উচিত।’
এদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া টাকা আবার ফেরত আনতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো জোর জবরদস্তি নয়, তারা নিজেরাই এদেশের বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনীতিক সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে টাকা ফেরত আনবেন।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ব্যাংকের সব গ্রাহকের জন্য একই ইন্টারেস্ট রেট। এটা ভুল নিয়ম। যেসব গ্রাহক ভালো তাদের প্রণোদনা দেয়া উচিত। তাদের ইস্টারেস্ট রেট কম হওয়া উচিত। তাহলে খেলাপি ঋণের হার কমবে।’
তিনি বলেন, ‘কাউকে জেলে পাঠাব না। ব্যবসা বন্ধ করব না। কিন্তু, সরকারের টাকা নিলে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। তা আদায় করব।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশে গরিব-ধনী সবার জন্য একই ভ্যাট-ট্যাক্স রেট, এটা ঠিক না। এটা হতে পারে না। রাজস্ব আদায় বাড়াতে ভ্যাট ও ট্যাক্স রেট কমানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবার আগে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য, খাদ্যপণ্য ও মেডিসিনে ভ্যাট অব্যাহতি দেব। এরপর কিছু পণ্য স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যবহারে আসে সেগুলোতে নূন্যতম ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট বসাব। আবার মধ্যবিত্তদের পণ্যে ৭ শতাংশ ও উচ্চবিত্তদের জন্য ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানো যায়। মোট কথা এক স্তরের ১৫/২০ শতাংশ ভ্যাট থাকবে না।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘করের হার নির্ধারণে আমরা সবাই বসব। এটা এমনভাবে নির্ধারণ করা হবে যাতে করদাতা ও আমরা উইন উইন পজিশানে থাকি। কারও মধ্যে যাতে এই প্রশ্ন না আসে আমি হেরে গেলাম, এইভাবে করের হার নির্ধারণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমারা আগামীতে কোন খাত, কোন বিষয় নিয়ে কাজ করব, তা ঠিক করতে হবে। আমাদের সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রায়োরিটি বেইজ করতে হবে।’
আগামী ১ বছর দেশের অর্থনীতি খুব ভালো যাবে জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের দেশে কর আদায় বাড়াতে হবে। মাত্র ১৪/১৫ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল করে। অথচ এদেশে অন্তত কোটি মানুষের কর দেয়ার সক্ষমতা আছে।’
‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে আয় বাড়াতে হলে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমি এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে চাই। প্রতি উপজেলায় অন্তত ১টি করে কর অফিস করতে চাই। এছাড়া এনবিআরে যত লোকবল প্রয়োজন দেব’, যোগ করেন তিনি।
নতুন অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাজস্ব আয় বাড়াতে সকল বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসাতে হবে। স্ক্যানিং করা ছাড়া কোনো পণ্য দেশে ঢুকবে না, বেরও হবে না। এছাড়া ভ্যাট আদায় বাড়াতে প্রত্যেকটা দোকানে ইসিআর দিতে হবে। এটা দোকানদারদের এনবিআরই দেবে। এনবিারের টাকা লাগলে টাকা দেব।’
উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি অর্থনীতির ছাত্র। ১৯৭৩ সাল থেকে আমি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছি। আপনারাও দীর্ঘদিন অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন। সুতরাং আমরা একসঙ্গে কাজ করব, সমস্যা হবে না।’