শাহরিয়ার কবিরের ইসলাম ও পর্দা বিরোধী বক্তব্য…!!!
কথিত বুদ্ধিজীবী শাহরিয়ার কবিরের মাস দুয়েক আগে সাক্ষাৎকার দেখলাম। গত ১৭ই আগস্ট ৭১ টিভিতে ধর্ম ব্যবসায়ী জামাত, বাতিল-পন্থী ও হাবি ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে একেবারে ইসলামের বিরুদ্ধে বলে ফেলেছে। আর নিজে বুদ্ধিজীবী সাজতে গিয়ে পরিণত হয়েছে গণ্ডমূর্খে।
‘সে যে মূর্খ তা সে নিজেই জানে না’!
১) সে বলেছে, হিজাব বা বোরকা আরব থেকে এসেছেঃ বোরকা আরব থেকে আসবে এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ মুসলমানদের নবী করিম সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবেই এসেছিলেন। সেখানে প্রথম পর্দা ফরজ হয়েছে, পরে তা সারা বিশ্বে জুড়ে ইসলামের আইন হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ইসলাম পূর্ব (জাহিলিয়াত) যুগে আরবের মহিলারা অনেকে পোশাক বিহীন অবস্থায় থাকত। তাহলে এখন যদি কেউ পোশাক-বিহীন অবস্থায় থাকে সেটা কি শাহরিয়ার কবির বলবে, এই কালচার আরব থেকে এসেছে?
২) সে বলেছে, বোরকা মরুভূমির পোশাক: রাশিয়ায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মত প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে চোখ মুখ ঢেকে পোশাক পরা হয়। লূ হাওয়া থেকে বাচতে মরুভূমিতে মুখ ঢাকতে হয়। তবে সেখান থেকে বোরকা এসেছে এটা মূর্খের মত কথা। কারণ বোরকা বা পর্দা কেমন হবে তা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন পাকে সূরা আহ-যাবের ৫৯ নং আয়াত শরীফে বলেছেন– মহিলারা যেন চাদরের একটা অংশ চেহারা ও বুকের উপর টেনে দেয়। তাই বোরকা বা পর্দায় শরীর কিভাবে ঢাকতে হবে তা কারো বানানো প্রথা নয়, কুরআন পাক দ্বারা নির্ধারিত নিয়ম।
৩) সে বলেছে, ষাটের দশকে সিনেমার নায়িকারা শর্ট স্লিভলেস ব্লাউজ পরতোঃ সিনেমার স্লিভলেস শর্ট ব্লাউজ দ্বারা যদি সে যদি সেই সময়কার সব মহিলার পোশাক বুঝাতে চায়, তবে সে একটা চরম শ্রেণীর মূর্খ। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের নায়িকারা সিনেমায় শুধু আন্ডার গার্মেন্টস টাইপ পোশাক পড়ে থাকে, তাহলে আজ থেকে ৫০ বছর পর কি সে বলবে, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের সমস্ত মহিলারা আন্ডার গার্মেন্টস পড়ে থাকতো।
৪) সে বলেছে, আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বোরকা পরিহিত মেয়ে ছিল না: ঠিক বলেছে। সেই মহিলারা সত্যিকারের পর্দা করত। যেসব প্রতিষ্ঠানে পুরুষ-মহিলা একত্রে (সহশিক্ষা) লেখা পড়া করত তারা সেখানে যেত না। পড়ত হয় মহিলা মাদ্রাসায় অথবা ইডেন বা বদরুন্নেসা মত মহিলা কলেজগুলোতে। কিন্তু যে সকল মেয়েরা বেহায়া টাইপের ছিল (মিতার মত) তারাই সহশিক্ষার (ছাত্র-ছাত্রী একত্রে) প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হত। ( কথাটা তিতা হলেও সত্যি)
৫) আগে রাস্তাঘাটে এত বোরকা পরিহিত মহিলা দেখা যেত না: ঠিক বলেছে। কারণ সেই সময় আমাদের নানী/দাদীরা প্রকৃত পর্দা করত। পবিত্র কুরআনে মহিলাদের অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে এবং ঘরের মধ্যে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। তারা সেটাই মানত। যদিও প্রয়োজনে কোথাও যেত তবে বোরকাতো পোরতই, একই সাথে মহিলাদের শারীরিক গঠন যেন বোঝা না যায় এজন্য রিকশায় উঠলে রিকশার চতুঃপার্শ্ব কাপড় পেঁচিয়ে যেত। মহিলারা রাস্তায় এখনকার মত পুরুষের সাথে একত্রে ঘুরে বেড়াত না। ভ্রমণের প্রয়োজন হলে ট্রেনে মহিলাদের জন্য আলাদা বগি থাকত। তাই রাস্তাঘাটে সাধারণভাবে বোরকা পরিহিত মহিলা খুব একটা দেখা যেত না।
৬) সে বলেছে, সুফিদের কালচার নাচ-গান: সুফিদের মধ্যে নাচ-গানের প্রচলন রয়েছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কারণ কেউ কখন কোন একটা দলিলও দেখাতে পারবে না যারা প্রকৃত সূফি বা ওলী আল্লাহ ছিলেন তারা কখন হারাম নাচ গান করেছেন। মূলত: বর্তমানে এক শ্রেণীর বেদাতি ডিজিটাল শ্রেণীর লোক বেরিয়েছে যারা সূফীদের নাম ভাঙ্গিয়ে খায় এবং মাযারগুলোতে গাঁজা, নাচ-গানের আসর বসায়। এরা জালালুদ্দিন রুমি রহমতুল্লাহি আলাইহির মত সুফি ওলী আল্লাহদের নামে মিথ্যা আরোপ করে বলে ‘ সূফিরা হারাম নাচ গান করেছেন’ এ কথা বলে নিজেদের হারামগুলোকে তারা জায়েজ করতে চায়।
৭) এটা তুর্কি, পাকিস্তান বা মিশরের ইসলাম নয়: আসলে সে জানে না ইসলাম কিভাবে এসেছে। ইসলাম এসেছে ওহী মাধ্যমে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে, পবিত্র কুরআন (ওহীয়ে মাতলু) ও হাদিসের (ওহীয়ে গায়রে মাতলুর) মাধ্যমে। এখানে পবিত্র কুরআন-হাদিস পাকে কি আছে তাই দেখতে হবে, সৌদি, তুর্কি, পাকিস্তান বা মিশরে কি আছে তাই দেখলে হবে না। পবিত্র কুরআনে সূরা নূর, সূরা নিসা ও সূরা আহ-যাবের মধ্যে স্পষ্ট করে পর্দার কথা বলা আছে, কিভাবে বোরকা পড়তে হবে তাও বলা আছে। তা না করলে দুনিয়াতে ফিৎনা বাড়বে (যা এখন হচ্ছে) তাও বলা আছে, পর্দা না করলে পরকালে কঠিন শাস্তি পেতে হবে তাও বলা আছে। সুতরাং এখানে কারো কোন মনগড়া কথা চলবে না।
সুতরাং গণ্ডমূর্খের মত কথা বলে বুদ্ধিজীবী সাজা যাবে না। আগে জানতে হবে তারপর বলতে হবে। আর একইসাথে ইসলাম বিরোধী বক্তব্যের জন্য মুসলমানদের কাছে শাহরিয়ার কবিরের ক্ষমা চাওয়াও উচিত।
(১) http://www.youtube.com/watch?
(২) https://www.youtube.com/watch?
পরিশেষেঃ একটু ভাবুনতো। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ভাবুন। আপনি যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে চিন্তা করেন, তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন এটা ইসলাম বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছুই না। মুহতারাম কবির সাহেবতো কখনো ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করার ব্যাপারে কিছু বলেন না। অথচ ভারতীয় চ্যানেলে সম্প্রচারিত বস্তাপচা অবাস্তব কাহিনী নির্ভর সিরিয়ালগুলো ধীরে ধীরে আমাদের সমাজকে, পারিবারিক বন্ধনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। কবির সাহেবরা (বর্তমান সরকার) এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। কি পরিমাণ ভয়ঙ্কর ইসলাম বিদ্বেষ এরা এদের অন্তরে লালন করে! কি জঘন্য তার মানসিকতা! কবির সাহেবের মত লোকেরাই কিন্তু গলার রগ ফাটিয়ে চিৎকার করে বলে, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।
তাহলে কেউ যখন ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধার্মিক হবার সিদ্ধান্ত নেয় তখন আবার কেন এরা আপত্তি তোলে? হিজাব পরিহিত নারীতে এদের আপত্তি, মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে গেলে এদের আপত্তি, যুবক পুরুষেরা দাড়ি রাখলে তাতেও এদের আপত্তি! এ তো বিশুদ্ধ ইসলাম বিদ্বেষ ছাড়া অন্য কিছু নয়। পঞ্চাশ ষাটোর্ধ বয়োবৃদ্ধরা যখন জ্ঞান বিতরণের নামে এই ধরণের কথা জনসম্মুখে বলে, তখন আমাদের সাবধান হওয়া ছাড়া কোন গতি নেই। আমি অনেককেই দেখছি, যারা সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলামী পোশাক পরছে। উনার মতো বিশিষ্ট আলেমে কট্টর সেক্যুলারিস্টের অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে আমজনতার অবস্থা তো আরো শোচনীয়।লেখক ;মোহাম্মাদ আনাম,ওয়াশিংটনডিসি।
সুত্রঃ আন্তর্জাল থেকে।