শেষ বিকেলের স্বস্তি তাইজুল-নাঈম

470

তিন’শ রান পেরোনো নিয়েই শঙ্কা জেগেছিল বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে। মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি স্বত্বেও প্রথম টেস্টের প্রথম দিনটা নিজেদের করে নিচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে মিডল অর্ডার ব্যর্থতা কিছুটা হলেও ঢাকা পড়ল লেজের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায়। শেষ বিকেলে দর্শকদের মনে স্বস্তির বাতাস বইয়ে দিলেন তাইজুল ইসলাম ও অভিষিক্ত নাঈম হাসান।

Taizul+Naeem
এই দুজনের ব্যাটে দিন শেষ হওয়ার আগে নবম উইকেটে ৫৬ রান যোগ হলো। তাতে ৮ উইকেটে ৩১৫ রান করে দিন শেষ করল বাংলাদেশ। তাইজুল ইসলাম ৩২ ও নাঈম হাসান ২৪ রানে অপরাজিত আছেন।

 চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টটিতে টস জিতে আগে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিল বাংলাদেশ। চোট কাটিয়ে এদিন অধিনায়ক হিসেবে একাদশে ফিরেন সাকিব আল হাসান। অভিষেক হয় স্পিনার নাইম হাসানের। প্রথম দিনে খেলা হয়ে ৮৮ ওভার। রং বদলের পুরো দিনটিতে শেষ পর্যন্ত দুই দলেরই থাকল সমান প্রাধান্য।

মুমিনুল হক ১২০, ইমরুল কায়েস ৪৪, সাকিব আল হাসান ৩৪ রানের ইনিংস খেললেন। ৪ উইকেট নিয়ে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলে ক্যারিবীয়দের সবচেয়ে সফল বোলার। ২ উইকেটে নেন জোমেল ওয়ারিক্যান।

 দিনের শুরুটা ছিল একেবারেই বাজে। দারুণ ফর্মের জানান দিয়ে জাতীয় দলে কামব্যাক করেছিলেন সৌম্য সরকার। ওপেনিংয়ের হতাশা কাটাতে লিটন দাসের জায়গায় দলে নেওয়া হয়েছিল সৌম্যকে। কিন্তু ২ বল খেলে শূন্য রানেই বিদায় নেন তিনি দিনের প্রথম ওভারেই। বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে তখন মাত্র ১ রান।

ওপর ওপেনার ইমরুল কায়েসের সঙ্গে মুমিনুল হকের লড়াই শুরু এরপর। টেস্টে ফর্মহীনতার মধ্যে যাচ্ছেন ইমরুলও। এদিন দুই বার জীবন পেয়েও ৪৪ রানের বেশি করতে পারলেন না। তবে মুমিনুল হকের সঙ্গে তার দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রানের জুটি মহামূল্যবান হয়েই থাকবে।

 ইমরুল নিজের ইনিংস বড় করতে না পরলেও মুমিনুল খেলে গেলেন দুর্দান্ত। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগের টেস্টেই প্রথম ইনিংসে খেলেছিলেন ১৬১ রানের ইনিংস। এদিন ক্যারিবীয় পেসে-স্পিনের বিরুদ্ধে তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি।

ইমরুলের বিদায়ের পর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে মুমিনুল গড়ে তুলেন ৪৮ রানের জুটি। ভালো খেলতে খেলতেও ২০ রান করে মিঠুন উইকেট উপহার দেন দেবেন্দ্র বিশুকে। এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন মুমিনুল।

 ১৩৫ বলেই সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন কক্সবাজারের ছেলে মুমিনুল। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যা তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। দেশের হয়ে সর্বাধিক সেঞ্চুরির তালিকায় মুমিনুল এখন তামিমের পাশে। এবছর মুমিনুলের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। টেস্টে এবছর সর্বাধিক ৪টি সেঞ্চুরি রয়েছেন আর একজনের- তিনি বিরাট কোহলি।

তবে একটা জায়গায় কোহলির চেয়ে এগিয়ে থাকছেন মুমিনুল। কোহলির যেখানে চার সেঞ্চুরির জন্য লেগেছে ১৮ ইনিংস, মুমিনুলের সেখানে লেগেছে ১৩ ইনিংস।

 মুমিনুল বিরত্ব ও সাকিব আল হাসানের দারুণ সহায়তায় বাংলাদেশ তখন বড় স্কোরের আশা দেখতে শুরু করেছিল। কিন্তু চা বিরতির পর হঠাৎই বদলে গেল দৃশ্যপট। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের দুর্দান্ত এক স্পেলে ভেঙে পড়েছিল বাংলাদেশের মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডার।

সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হককে তো ফেরালেনই, একই সঙ্গে গ্যাব্রিয়েল তুলে নিলেন সাকিব আল হাসান (৩৪), মুশফিকুর রহিম (৪) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে (৩)। ৪ উইকেটে ২২২ থেকে মুহূর্তেই ৭ উইকেটে ২৩৫ হয়ে যায় বাংলাদেশের স্কোর।

 তবে এরপর ব্যাটসম্যানদের শুধু লজ্জাই উপহার দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। অষ্টম উইকেটে মিরাজ ও নাঈম মিলে যোগ করেন ২৪ রান। ব্যক্তিগত ২২ রানে জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন মিরাজ।

ঠিক তখন তিন’শ রানের নিচে অল আউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা জাগে টাইগারদের। কিন্তু তাইজুল ও নাঈম মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন উইকেটে। দিন শেষে নবম উইকেটে ৫৬ রান যোগ করেন তাইজুল-নাঈম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রথম দিন শেষে

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৮৮ ওভারে ৩১৫/৮ (ইমরুল ৪৪, সৌম্য ০, মুমিনুল ১২০, মিঠুন ২০, সাকিব ৩৪, মুশফিক ৪, মাহমুদউল্লাহ ৩, মিরাজ ২২, নাঈম ২৪*, তাইজুল ৩২; রোচ ১/৫৫, গ্যাব্রিয়েল ৪/৬৯, চেজ ০/৪২, ওয়ারিক্যান ২/৬২, বিশু ১/৬০, ব্র্যাথওয়েট ০/১৯)।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.