শেয়ারবাজারের বাদল ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ

560

শেয়ারবাজার কারসাজির অন্যতম হোতা লুৎফর রহমান বাদল ও তার স্ত্রী সোমা আলম রহমানের নামে থাকা সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

ACC-Side Story

দুর্নীতি দমন কমিশনের করা সম্পদ জব্দ করার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য নিশ্চিত করেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮  মে দুদকের উপ পরিচালক শেখ আবদুস সালাম বাদী হয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক লুৎফর রহমান বাদল বিরুদ্ধে মামলা করে। এর ঠিক পরদিন ২৯ মে তার স্ত্রী সোমা আলম রহমানের নামে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়।

স্পেশাল জজ আদালতে পাঠানো দুদকের চিঠিতে দুদকের উপ-পরিচালক ও  মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন মৃধা বলেন, আসামি লুৎফর রহমান বাদল দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে পালাতক আছেন। দুদক বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছে, আসামিরা সম্পদ হস্তান্তরে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এসকল সম্পদ হস্তন্তর করলে বিচারের রায় শেষে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ ও জরিমানা আদায় একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়বে। তদন্তের স্বার্থে আসামি বাদলের নামে বিভিন্ন লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার মূলধন ও বিও একাউন্ট অবরুদ্ধ এবং বাড়ি-ফ্ল্যাট ও জমি ক্রোক করার প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করার জন্য আবেদন করছি।

প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, দুদক ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও নরসিংদীর মহানগর স্পেশাল জজ আদালতের কাছে লুৎফর রহমান বাদল ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দ করার আবেদন করে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি আদালত সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, লুৎফর রহমান বাদলের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরীণে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩ টাকার তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন ও ৫৯ কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ২৯০ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহিভূর্ত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ঘোষিত স্থাবর অস্থাবর সম্পদ যাচাইকালে দেখা গেছে- স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ হচ্ছে, ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ২ হাজার ৭১৫ ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১১৪ কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার ৬৮১ টাকা। ফলে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৩০ কোটি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৬ টাকা।

অন্যদিকে তার স্ত্রী সোমা আলম রহমানের দুর্নীতি বিষয়ে বলা হয়েছে, সোমা আলমের দাখিলকৃত সম্পদের বিবরণীতে ২ কোটি ২৬ লাখ ৯০  হাজার টাকার তথ্য অসৎ উদ্দেশ্য গোপন ও ৯২ কোটি ৮২ লাখ ৮২ হাজার ৩৭২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে।

দুদক তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ যাচাইকালে দেখেছে, তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ২২২ টাকা ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১৩২ কোটি ৭৬ লাখ ৪৭ হাজার।

তার স্ত্রী সোমার সম্পদের পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৭ টাকা।

ফলে লুৎফর রহমান ও তার স্ত্রী সোমা আলমের মোট সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ২৬৮ কোটি টাকা। এই সকল সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত।

জানা গেছে, দণ্ডবিধি ৩৮৬ মোতাবেক তার সকল স্থাবর সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসির কাছে জব্দ থাকবে। অন্যদিকে অস্থাবর সকল সম্পত্তি ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জব্দ থাকবে বলে জানা গেছে।

ক্রোক (জব্দ) করা স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে- লুৎফর রহমানের বনানীর পুরাতন ডিওএইচএসের ৫ নং রোডের ৬৮ নম্বর বাড়ি, বাড়িধারা মডেল টাউনের তিন তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি, ধানমন্ডির রয়েল প্লাজা, বনানীর গলফ হাইটস, গুলশানের ভাটারার ১৩ বর্গফুটের বাড়ি এবং কাকরাইল ও রমনার ভিটি ভূমি প্রমুখ।

আর অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে-  সাউথ ইস্ট ব্যাংকের একক ও যৌথ হিসাব, ওয়েসিস ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন লি: এর ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, সিনক্লিয়ার ফার্মাসিটিক্যালের ১ লাখ টাকার শেয়ার, লতিফ সিকিউরিটিজস লি: এর ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, বিসি কর্পোরেশনের ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, ডায়াপার লি: শেয়ার ৬০ লাখ টাকার শেয়ার, বেঙ্গল মিডিয়া কর্পোরেশনের ১ কোটি টাকার শেয়ার, আল মানার হাসপাতালের ৬৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার, ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৪১ লাখ ৮১  এবং অন্যান্য সম্পদ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.