শ্বশুরকে সমর্থন দিয়ে মিলল ‘লাশ’ দেখার অনুমতি
নির্বাচনের প্রার্থিতা দ্বন্দ্বে নিজের লাশ না দেখার ওসিয়ত করেছিলেন জামাইয়ের বিরুদ্ধে। অবশেষে শ্বশুরের কাছে দমে গেলেন জামাই অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।
শ্বশুর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকে সমর্থন দিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন।
এরই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসনে শ্বশুর-জামাই মুখরোচক আলোচনার অবসান হলো।
বর্তমান এমপি জিয়াউল হক মৃধা এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান। মহাজোট তাকে সমর্থন না দিয়ে এই আসনে মৃধার জামাই এবং এরশাদের যুববিষয়ক উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে লাঙ্গলের প্রার্থী মনোনীত করে। এতে করে জামাইয়ের বিরুদ্ধে সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মৃধা।
শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শ্বশুর ও জামাই উপস্থিত হন। সেখানে সিংহ প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনে আমাকে মহাজোট থেকে এখানে লাঙ্গলের প্রার্থী করা হয়েছিল। এলাকাবাসীর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। কিন্তু, মহাজোটের আসন্ন জয়কে বাধাগ্রস্ত করতে যে অপশক্তি ষড়যন্ত্র করছে, তাদের কারণেই আমাকে সরে দাঁড়াতে হলো।’
তিনি শ্বশুরকে নিয়ে এই অপশক্তিকে রুখে দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনারও ঘোষণা দেন।
প্রার্থিতা নিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘পারিবারিকভাবে উনার (জিয়াউল হক মৃধা) সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। তবে সত্য, মনোনয়ন নিয়ে রাজনৈতিকভাবে কাল্পনিক বিরোধ তৈরি হয়েছিল। আজকের পর থেকে সেটি দূর হয়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে শ্বশুরের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা ছিল। তার সঙ্গে আমি নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে ছিলাম। এজন্য ভেবেছিলাম, সরাইলের মানুষ আমাকে গ্রহণ করবে। কিন্তু, বাস্তবে তেমনটি হয়নি। এজন্য স্থানীয় জনসমর্থনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি নির্বাচন থেকে সরে গেলাম, শ্বশুরের পক্ষে কাজ করব।’
নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘সরাইল-আশুগঞ্জে নির্বাচন ঘিরে গভীর ষড়যন্ত্র, ভানুমতীর খেলা চলছে। এই খেলার অবসান ঘটানোর জন্যই আজ থেকে মহাজোট শক্তিশালী হলো। আমরা সরাইল-আশুগঞ্জকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে, সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা করব।’
তিনি বলেন, ‘রেজাউল শেষ পর্যন্ত তার ভুল বুঝতে পেরেছে। এজন্য আমি তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
জামাইয়ের বিরুদ্ধে আগের অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘আমরা (শ্বশুর-জামাই) বুঝতে পেরেছি, পানি কাটলে ভাগ হয় না, রক্ত কাটলেও আলাদা হয় না। এজন্যই আমরা আজ মিলিত হয়েছি। পারিবারিকভাবে মিলে গেছি। আমি আমার আগের সব কথা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের মহাসচিব অধ্যক্ষ শাহাজাহান আলম সাজু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হান্নান রতন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন মন্তু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার ইসমত আলী প্রমুখ।