শ্বাসরুদ্ধকর ১৬২ সেকেন্ড!!

809

নিউজবিডিইউএস:আজ ১০ই মে বিকেলে (ফ্লোরিডা সময় ৪ঃ১২ মিনিট, বাংলাদেশ সময় রাত ২ঃ১২ মিনিটে ) ফ্যালকন ৯ এর নয়টা মার্লিন ইঞ্জিন ১৬২ সেকেন্ড ধরে পুড়ে ১৮ লক্ষ পাউন্ড থ্রাস্ট তৈরী করে মহাকাশে নিয়ে যাবে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু -১। জানি এই খবরটা একেকজন একেক রকম ভাবে দেখবেন। যারা সবকিছু রাজনীতির চশমা দিয়ে দেখেন তারা কেউ কেউ অতিরঞ্জিত করে ফেলবেন দু’ভাবেই।FB_IMG_1525952606865 কেউ একে মহাকাশ বিজয় বলবেন, আবার কেউ বলবেন এটা টাকা ওড়ানোর বা বানানোর ফন্দী। আমি রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমি শুধু দেখছি বিজ্ঞানের দৃষ্টি ভঙ্গীতে। এক সময় নাসাতে কাজ করতাম। তখন মিশন কন্ট্রোল রূমে বসে দেখেছি কিভাবে লঞ্চ হয়। ফ্লাইট ডিরেক্টর কিভাবে প্রতিটি খুটিনাটি দেখে বলতেন, “ইটস আ গো”। এরপর যখন কাউন্ট ডাউন হত, তখন গায়ের সবগুলো পশম দাঁড়িয়ে যেত, দু’চোখ ভিজে যেত। লঞ্চ হবার পর থেকে আমরা মুহুর্ত গুনতাম প্রথম স্তরের রকেট গুলো না পোড়া পর্যন্ত। ইস সেই রোমাঞ্চকর মুহুর্ত গুলো লিখে বোঝানো যায় না। এরপর এক সময় সবাই দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ দু হাত তুলে “ইয়েস” বলে চিৎকার করে উঠতাম ছোট্ট শিশুদের মত। একটি ছোট্ট ভুলের জন্য মুহুর্তেই পুরে ছাই ছাই হয়ে যেতে পারে এই রকেট এবং তার পেলোড।

আগামীকাল সব রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে ছোট্ট শিশুদের মতন উৎসব করার দিন। থমকে থাকুক সারা বাংলাদেশ এই ১৬২ সেকেন্ড। রাস্তায় সব গাড়ি থেমে থাকুক। সব হর্ন বাজুক (হাসপাতালের সামনে নয়)। সবগুলো সাইরেন বেজে উঠুক। আজান হোক প্রতিটি মসজিদে যেমন হয় ঝড়ের সময়। তোপধ্বনি হোক ২১ বার থেকে এই ১৬২ সেকেন্ড ধরে। ঢোল বাজুক, ভুভুজেলা বাজুক সবার বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে। আগামীকাল সব স্কুলে জাতীয় সংগীত গাওয়া হোক তারপর শিক্ষার্থীদের বলা হোক কি অসাধারণ ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। অকারনেই হাসুক বাংলাদেশের সব মানুষ। মুষ্টিবদ্ধ ৩২ কোটি হাত উঠুক বলার জন্য, “হ্যাঁ আমরাও পারি”। বাংলাদেশের সব মানুষ জানুক মহাকাশে আজ বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা যাচ্ছে। এই ১৬২ সেকেন্ড হয়ে উঠুক দুনিয়া কাপানো ১৬২ সেকেন্ড। এই বিশ্ব জানুক, আমরা আছি।

আমরা যারা প্রযুক্তিবিদ, যারা রাজনীতি বুঝি না, কিন্তু ভালোবাসি বাংলাদেশকে, আমাদের জন্য এক অপার, অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে আগামীকাল থেকে। আমরা এখন আর স্বপ্ন দেখতে ভয় পাবো না। সেদিন আর বেশী দূরে নেই যেদিন মহাকাশে যাবে বাংলা মায়ের দামাল সন্তানদের তৈরী রকেট, স্পেসশীপ। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে দেখুন দুচোখ মেলে আগামীকাল কিভাবে মহাকাশের বুক চিরে বাংলার পতাকা যায় মহাশূন্যে।(লেখক: আজাদুল হক, তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ, হিউস্টন, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র)

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.