সংলাপে সংকট সমাধান চান ড. কামাল
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সরকারের ‘রাজ চালাকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, আসুন জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে সংবিধান অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকার গঠন করি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে এ আলোচনার আয়োজন করে গণফোরাম।
ড. কামাল বলেন, আমার খুব দুঃখ লাগে, ৩০ ডিসেম্বর যে ঘটনা ঘটলো; স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও এটা দেখতে হচ্ছে সেটা আমি বিশ্বাস করতে পারি না। এটা হওয়ার কথা না। ৪৮ বছর পরে এটা কেন এভাবে হবে।
তিনি বলেন, আমিতো সরলভাবে বলেছি, ভাই সকালে সকালে গিয়ে ভোট দেবেন। কিন্তু টেলিভিশনে বলেছে কামাল হোসেনতো বুঝতেই পারছেন না, ঘটনাতো রাতেই ঘটে গেছে। উনি সকালে সকালে বলছেন। এটার মানে কি হল। যেভাবে হল আমরাতো কেউ টেরই পেলাম না যে আমাদের ভোট দেওয়া হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আজকে প্রশ্ন রাখতে চাই, এইসব অস্বাভাবিক কাজ কেন হচ্ছে? চতুর্থবারের মতো একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। ৩০০ লোক সংসদ সদস্য হয়ে গেছে। আর বিরোধীদলে সাতজন, আমাদের দুজন। এটার অর্থটা কি? এটা কি একটা খেলা নাকি? ১৭ কোটি মানুষকে নিয়ে কি খেলা করা যায়? সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে উচ্চারণ হচ্ছে যে নাটকগুলো করেছে। আমি মনে করি মানসিকভাবে ভারসাম্য না হারালে এগুলো হয় না।
ড. কামাল বলেন, চুপি চুপি রাতে কি হলো, সকালে জানিয়ে দিল যে শেষ। রাষ্ট্রকে নিয়ে এভাবে খেলা করাতো চলে না। আমি মনে হয় যারা এগুলো করছে হয় তারা না বুঝে করছে। তাদেরকে যে উপদেশ দিচ্ছে তারা সঠিক দিচ্ছে না। এই তৃতীয়বারের মতো পাঁচ বছর আমরা হয়ে যাচ্ছি এই ধরনের তথাকথিত নির্বাচন এটা কোনো সুস্থ মানুষের করার কথা না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আইনানুগভাবে এটা হয় না। সংবিধান অনুযায়ী এটা হয় না। সংবিধান মানতে সবাই বাধ্য। সংবিধানের ঊর্ধ্বে কেউ না। কিন্তু এসব সংকট কেন সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের জনগণ ক্ষমতার মালিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছিল। ২০১৪ সালে কেউ নির্বাচনে গেল না। তারা বললো সাময়িকভাবে করা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন না দিয়ে ৫ বছর থাকলো। পাঁচ বছর পরে যখন নির্বাচন আসলো এখনও এই প্রহসন দেখতে হচ্ছে। এটাকে বঙ্গবন্ধু বলতেন রাজ চালাকি। আমরা রাজনীতি থেকে সরে রাজ চালাকিতে চলে যাচ্ছি। ৩০ ডিসেম্বর যেটা হয়েছে, সেটা রাজ চালাকির একটা সুন্দর উদাহরণ। আমি বলবো, এই রাজ চালাকি থেকে বিরত থাকেন। সংবিধান অনুযায়ী আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে যা করার করেন। এছাড়া কোনো বিকল্প হতে পারে না। কারও জন্য এটা মঙ্গল হবে না। যারা করবে তাদের জন্যও না, যাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে তাদেরতো একদমই হবে না।
কামাল বলেন, যেখানে সংকট বা বিরোধ সৃষ্টি করার কোনো প্রয়োজন নাই। কেন সংকট সৃষ্টি করছেন। এটা কোনো সুস্থ মানুষের করার কথা না। আমি আবার বলছি। সুস্থ মানুষ জেনেশুনে বিরোধ সৃষ্টি করবে কেন। আজকে শতকরা একশভাগ মানুষই বলবে, সরকার গঠন করতে হলে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। ৩০ ডিসেম্বর যেটা হয়েছে সেটা কি কেউ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন বলবে। আসুন বছরের প্রথম দিকে সংকট সৃষ্টি না করে সবার সঙ্গে জাতীয় সংলাপ সবচেয়ে ভাল পথ। সংলাপের মধ্যে দিয়ে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হোক কিভাবে আমরা সংবিধানকে মেনে, নির্বাচন করে, নির্বাচিত সরকার গঠন করব।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সায়িদ, মোস্তফা মহসিন মন্টু, মেজর জেনারেল অব. আমসা আমিন, মফিজুল ইসলাম কামাল প্রমুখ।