সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দেয়ার প্রত্যয়
একাদশ সংসদ নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী উদযাপন হয়েছে অনেকটা নির্বাচনী আবহে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসর স্বাধীনতাবিরোধী সকল প্রার্থীকে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট অধিকার আদায়ে জনগণের ঐক্যের শক্তিকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যে আন্দোলন চলছে, তাতে ঐক্যবদ্ধ জনগণের বিজয় অনিবার্য।
আর সাধারণের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ ভোট। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই সরকারে আসবে, তারা যেন দেশের উন্নয়নযাত্রা অব্যাহত রাখে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিয়ে সম্প্রীতির সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।
সেই বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী রোববার রাজধানীসহ সারা দেশে এবং বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে উদযাপিত হয়েছে।
শীতের কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষের ঢল নামে। শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে তারা ৩০ লাখ শহীদকে স্মরণ করেন।
ফুল, মাথায় বিজয় দিবস লেখা ব্যান্ড আর জাতীয় পতাকা হাতে স্মৃতিসৌধে নানা বয়সী জনতার ঢল নামে।
বরাবরের মতো জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
এরপর ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেয়া হয় স্মৃতিসৌধ। এরপর সেখানে সাধারণ মানুষের ঢল নামে।
এ সময়ে প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমিক আর শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠে স্মৃতিসৌধের বেদী। একে একে বেদীতে শ্রদ্ধা জানায় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।
এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। এ সময় জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে ঐক্যকে সামনে রেখে বিজয় অর্জন করেছিলাম, সেই শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই ঐক্যের বিরুদ্ধে যারা লাগে, সেটি যেকোনো দিক থেকে হোক, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। আসুন আমরা ঐক্যকে সুসংহত করি। মনে রাখবেন, ঐক্যবদ্ধ জনগণের বিজয় অনিবার্য।’
শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষ নানা স্লোগান দেন। স্মৃতিসৌধ এলাকায় দেশাত্মবোধক গান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বেজে চলছিল বিরামহীনভাবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার এই ঢল অব্যাহত থাকে বেলা ২টা পর্যন্ত।
পরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডিন্থ ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর দলীয় নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে রাজারবাগ স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাভেদ পাটোয়ারী, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা হয়েছে।
রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙ-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়।
শহীদদের আত্মার শান্তি, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল ১০ টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এ ছাড়া দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেও মোনাজাত করা হয়। মিলাদ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান।