হলি আর্টিজান মামলার আসামি জঙ্গিনেতা খালেদ গ্রেফতার
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেএমবির শীর্ষ নেতা শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে রাহাত ওরফে নাহিদ ওরফে আবু সুলাইমানকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, খালিদ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘নব্য জেএমবির’ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।
শুক্রবার বিকালে র্যাব তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল-মহিপুর রোড থেকে গ্রেফতার করে। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল হাকিমের ছেলে। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। হলিআটিজার্ন বেকারিতে হামলার ঘটনায় আসামি শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার চলছিল। তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে সম্পত্তি জব্দেরও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি মধ্যরাতে র্যাব গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির অন্যতম শুরা সদস্য রিপনকে গ্রেফতার করা হয়। রিপন হলি আর্টিজান হামলার অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতা।
র্যাব-৫-এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার সাঈদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, র্যাবের ঢাকা সদর দফতর থেকে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে হলি আর্টিজন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়। এ বিষয়ে র্যাবের প্রধান কার্যালয় (ঢাকা) থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
তিনি বলেন, হলি আর্টিজান হামলায় জড়িত জঙ্গিদের ধরতে কয়েক দিন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা চালায় র্যাব। গত ২২ জানুয়ারি ওই জঙ্গিদের ধরতে শিবগঞ্জের শিবনায়ণপুরে তারা অভিযান চালায়। কিন্তু সেখান থেকে কোনো জঙ্গিকে আটক করতে পারেনি র্যাব।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে পাঁচ তরুণের ওই হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন কমান্ডো অভিযানে নিহত হন হামলাকারী পাঁচ তরুণ রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে জীবিত ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। চিহ্নিত বাকি ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ৬ মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করা, বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ বানানো।
আসামিদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে গতবছর ২৬ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্র্যনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমান।
মামলার আসামিদের মধ্যে নব্য জেএমবির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও হাদিসুর রহমান সাগরকে আগেই গ্রেফতার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাকি দুই আসামি শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার চলছিল। তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে সম্পত্তি জব্দেরও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
গত ১৯ জানুয়ারী মধ্যরাতে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে রিপনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর এই হামলা মামলার অপর আসামিকে ধরতে কয়েকদিন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা চালায় র্যাব। বৃহস্পতিবার শিবগঞ্জের শিবনায়ণপুরে অভিযানে গিয়ে ব্যর্থ হন র্যাব সদস্যরা। সে সময় র্যাব কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গেছে জঙ্গি।
উল্লেখ্য, খালেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর রেজাউল করিম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ৫০ গজ দূরে রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়।