হিমালয় কন্যাদের হারিয়ে সাফে ইতিহাস বাংলাদেশের
নেপালের আকাশে শুরু থেকেই ছিল কালো মেঘের ঘনঘটা। সেই কালো মেঘ যেন এসে ভর করে দেশটির ফুটবল দলের ওপরও। তার ওপর আবার বৃষ্টিতে ভিজে মাঠ পুরোই কর্দমাক্ত। তাতেও বাংলাদেশ এগিয়েই ছিল। তবে খেলা শেষ হতে যখন মাত্র ২০ মিনিট বাকি, তখনই যেন বাংলাদেশের দর্শকদের মনে উঁকি দেয় শঙ্কার মেঘ। অনিতা বাসেন্তের দেওয়া গোলে ব্যবধান কমিয়ে ফেলে নেপাল। তাতে শঙ্কা আরও ঘনিভূত হয়। তবে ছয় মিনিট পরেই সেই শঙ্কা উড়িয়ে দেন কৃষ্ণা। তাতে শেষ বাঁশি বাজার আগেই নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।
কৃষ্ণা রাণী সরকারের জোড়া গোলে স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। হিমালয় কন্যাদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনাল জিতে ইতিহাস গড়েছেন সাবিনা-শামসুন্নাহাররা।
কাঠমুন্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বিকেল সোয়া ৫টায় শুরু হওয়া ফাইনালের ১৪ মিনিটেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্নাকে নিয়ে শঙ্কা ছিল। সে শঙ্কা কাটিয়ে তাকে নামানো হয় প্রথম একাদশে। কিন্তু কাদায় পড়ে ১০ মিনিটের মাথায় আবার ব্যথা পেলে তাকে তুলে নেওয়া হয়। মাঠে নামানো হয় শামসুন্নাহার জুনিয়রকে। মাঠে নেমে ৪ মিনিটের মাথায় গোল করলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
গোল হজমের পর নেপাল ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে। কিছু সময় তারা বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তারও করে। দুইবার ভালো দুটি সুযোগও আদায় করে নিয়েছিল স্বাগতিকরা। অনেকগুলো সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের। কিন্তু শেষটা ঠিকমতো হচ্ছিল না বাংলাদেশের মেয়েদের। নেপালও অনেকগুলো সুযোগ নষ্ট করেছে।
এরমাঝে একবার গোল হজম করতে বসেছিল সাবিনারা। গোল পোস্টে লেগে বল ফিরে আসায় সে যাত্রায় রক্ষা হয়। ৩৫ মিনিটে আনিতার ফ্রি-কিক গোলরক্ষক রূপনা চাকমা ডান দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন। ওই কর্নার থেকেই গোলমুখে জটলা হলে গোল প্রায় হজমই করে ফেলেছিল বাংলাদেশ; কিন্তু গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে দলকে বাঁচান মাসুরা পারভীন।
তবে ম্যাচের ৪২ মিনিটে কৃষ্ণা রাণী সরকারের গোলে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ। শামসুন্নাহার ও কৃষ্ণার গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে স্বাগতিক নেপাল। যার ধারাবাহিকতায় ৭০ মিনিটে একটি গোল পরিশোধ করে ফেলে নেপাল। আনিতার দারুণ এক শট জড়িয়ে যায় বাংলাদেশের জালে।
তবে, ২-১ গোলকে নিরাপদ মনে করেননি বাংলাদেশের মেয়েরা। যে কারণে আরও একটি গোল আদায়ের লক্ষ্যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে তারা। খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ৭৬ তম মিনিটেই গোল আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। কৃষ্ণা রানী সরকারের দ্বিতীয় গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-১ গোলের ব্যবধানে।
আর তাতেই প্রথমবারের মতো নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা হয়ে যায় বাংলাদেশের। ২০০৩ সালে রজনীকান্ত বর্মনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ছেলেরা প্রথম সাফ জয় করেছিল। দেড় যুগ পর দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ফের বাংলাদেশের হলো।