২ মামলায় জামিন পেলেন খালেদা

616
ঢাকা অফিস:  জিয়া চ্যারেটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করে এক লাখ টাকার মুচলেকায় জামিন পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।photo-1508399042
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং পরে জামিন আবেদন করেন।বিএনপির চেয়াপারসনের পক্ষে আদালতে জামিন আবেদন করেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার। তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জামিন চান। অপরদিকে জামিনের বিরোধিতা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এক লাখ টাকার মুচলেকায় খালেদা জিয়ার জামিনের আদেশ দেন। তবে আদালত বলেছেন, মামলা চলাকালে ভবিষ্যতে বিদেশে যেতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।

এ দিন আদালত এ মামলার অপর দুই আসামি কাজী সেলিমুল হক এবং শরীফ উদ্দীনকে জামিন দিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন দাখিল করে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তিনি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই দুটি মামলায় তিনি সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন। গতকাল রাতে তিনি বাসায় ফিরেছেন। আজ সকালেই তিনি আদালতে এসেছেন আত্মসমর্পণের জন্য। সাবেক প্রধানমন্ত্রী আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণেই জামিন চাইতে এসেছেন। তিনি আদালতের নির্দেশ মান্য করেই চলেন। তাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী জামিন কামনা করছেন।

অপরদিকে জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এর আগেও দুইবার খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করা হয়েছিল। তিনি জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। তিনি বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। সুতরাং তাঁর জামিনের বিরুদ্ধে আপত্তি জানাচ্ছি।

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের সময় ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার ছাড়াও অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, আবদুর রাজ্জাক খান, নিতাই রায় চৌধুরী, এ জে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে আজ আদালতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদীন ফারুক, আমানুল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাসা থেকে আদালতের উদ্দেশে বের হন। চিকিৎসা শেষে তিন মাস পর গতকাল বুধবার বিকেলে তিনি লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরেছেন।

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। এর মধ্যে দুটি মামলায় জামিন পেলেন, দুপুরে জেলা জজ আদালতে আরেকটি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন খালেদা জিয়া।

এ ছাড়া বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় গত ৯ অক্টোবর বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন বেগম। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর মানহানির মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম নূর নবী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

বিএনপি মনে করে, রাজনৈতিক কারণেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। যদিও সরকার বলেছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আদালতের ব্যাপার।

গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন। বড় ছেলে ও দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন। এ সময়ই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশিদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।

২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.