লুইস ঝড়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ
মিরপুরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে শনিবার কার কাছে হারল বাংলাদেশ? ইতিহাস বলবে, হারটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। কিন্তু, কার্যত বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরেছে এক এভিন লুইসের কাছেই।
শীতের শান্ত-শীতল সন্ধ্যায় মিরপুরে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন লুইস। বাংলাদেশি বোলারদের তুলোধুনো করে মাত্র ৩৬ বলেই করেছেন ৮৯ রান। তার সেই ঝড়ো ইনিংসে চড়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায় ১৯০ রানের পুঁজি।
তার জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ ১৪০ রানেই অলআউট। ৫০ রানে জিতে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল সফরকারীরা।
এক পর্যায়ে ৯৬ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের দলের ভাগ্যে হারটা লেখা হয়ে যায় তখনই। কিংবা তারও আগে। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজ ও আবু হায়দার রনি জুটি বেঁধে দলকে ওই পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। তবে তাতে শুধু হারের ব্যবধানটাই কমেছে মাত্র। জয়ের আশা তারা জাগাতে পারেননি।
বাংলাদেশকে ১৪০ রানেই থামিয়ে দিয়ে অসাধারণ কৃতিত্বই দেখিয়েছেন ক্যারিবীয় বোলাররা। তবে, বাংলাদেশের হারটা মূলত এভিন লুইসের কাছেই। তার ওই ঝড়ো ইনিংসই শুষে নেয় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস। আর ক্যারিবীয়দের করে তুলে চাঙ্গা।
২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটাও ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবীয়দের সেই ব্যর্থতায় সান্ত্বনার প্রলেপই দিয়েছে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।
অলিখিত ফাইনালে রূপ নেয়া ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শীতের কুয়াশার বিচারে সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল। কিন্তু, শেষ সান্ত্বনা পাওয়ার নেশায় বুদ ক্যারিবীয়দের ক্ষুধার কাছে সাকিবের সেই সিদ্ধান্ত বিপরীত ফলই হয়েছে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেই ঝড় তোলেন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার এভিন লুইস ও শাই হোপ। দু’জনে মাত্র ৫ ওভারেই তুলে ফেলেন ৭৬ রান! ওয়ানডে সিরিজ ও টি-টোয়েন্টির আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের যমদূত হয়ে দেখা দেন শাই হোপ।
আজ সেই শাই হোপকে ছাপিয়ে দানব হয়ে উঠেন লুইস। শাই হোপও শুরু করেন দারুণ। মাত্র ১২ বলেই করেন ২৩ রান। কিন্তু, লুইস ঝড়ের কাছে বেশ শান্তই মনে হচ্ছিল তাকে। শাই হোপ ফিরে যাওয়ার পরও বেশ খানিকক্ষণ লুইস তাণ্ডব চলে।
তাতে ক্যারিবীয়রা মাত্র ৯.২ ওভারেই করে ফেলে ১২২ রান। সেটাও মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে। ক্যারিবীয়দের ইনিংস তখন ২৫০ ছুঁবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু, সেটা হয়নি শেষ ভাগে বাংলাদেশি বোলারদের দায়িত্বশীল দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে। আরও একটু স্পষ্ট করে বললে মাহমুদউল্লাহর কারণে।
মাহমুদউল্লাহ এসেই প্রথমে থামান লুইস ঝড়। তবে তার আগেই ক্যারিবীয় ওপেনার ৮ ছক্কা ও ৬ চারে ৩৫ বলে করে ফেলেছেন ৮৯ রান। লুইসকে আউট করার পরের বলেই মাহমুদউল্লাহ ফিরিয়ে দেন আরেক ডেঞ্জারম্যান শিমরন হেটমেয়ারকে। মানে পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে মাহমুদউল্লাহ জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা। সেটা পূরণ না হলেও পরবর্তীতে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ।
সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজের দারুণ বোলিংয়ে তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯.২ ওভারে ১৯০ রানেই অলআউট হয়ে যায়। মানে ক্যারিবীয় শেষ ১০.৪ ওভারে করেছে মাত্র ৬৮ রান। হারিয়েছে ৯ উইকেট।
ক্যারিবীয়দের লাগাম টেনে ধরার পর জয় স্বপ্নই উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু, বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ফেলে শুরুতেই। স্কোরবোর্ডে ২২ রান উঠতেই ফিরে যান তামিম (৮)। ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে এরপর একে একে বিদায় নেন সৌম্য সরকার (৯), সাকিব (০), মুশফিক (১), মাহমুদউল্লাহরা (১১)।
৮০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর আশার প্রদীপটা মিটমিট করে জ্বলছিল। কারণ, একপ্রান্ত আগলে রেখে তখনো উইকেটে ছিলেন ‘ভাগ্যবান’ লিটন দাস। ভাগ্যবান বলার কারণ তিনিও আউট হয়েছিলেন। কিন্তু, ক্যাচ দিয়েও তিনি বেঁচে যান বাংলাদেশি আম্পায়ার তানভীর আহমেদের জঘন্য এক সিদ্ধান্তে।
থমাস উশানের বলে লং অফে ক্যাচ দেন লিটন। কিন্তু, আম্পায়ার তানভীর ডাকেন নো বল। কিন্তু, রিপ্লেতে পরিষ্কার, বোলার থমাসের পা দাগের ভেতরেই ছিল। এটা কোনোভাবেই নো বল নয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচে এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত সত্যিই বড় বেশি দৃষ্টিকটূ।
ক্যারিবীয়রা রিভিউ নিতে চাইলেও আম্পায়ার তানভীর তা দেননি। এ নিয়ে তর্কাতর্কিতে খেলা বন্ধও থাকে বেশ খানিকটা সময়।
যাই হোক, আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বেঁচে যাওয়া লিটনও শেষ পর্যন্ত নায়ক হয়ে উঠতে পারেননি। বরং দলকে ৮৯ রানে রেখে তিনিও বিদায় নিলে হার নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।
পরে মিরাজ-রনিরা শুধু ব্যবধান কমিয়েছেন। ম্যাচসেরার পুরস্কারটি যথারীতিই গেছে লুইসের পকেটে। সিরিজ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৭ ওভারে ১৪০ (তামিম ৮, লিটন ৪৩, সৌম্য ৯, সাকিব ০, মুশফিক ১, মাহমুদউল্লাহ ১১, মিরাজ ১৯, আরিফুল ০, সাইফুদ্দিন ৫, আবু হায়দার ২২*, মোস্তাফিজ ৮; পল ১৫/৫, অ্যালেন ১৯/২, ব্রাফেট ১৫/১, কটরেল ৩২/১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৯.২ ওভারে ১৯০ (লুইজ ৮৯, হোপ ২৩, পল ২, পাওয়েল ১৯, হেটমেয়ার ০, পুরান ২৯, ব্রাফেট ৮, রাদারফোর্ড ২, অ্যালেন ৮, কটরেল ২*, থমাস ০; মাহমুদউল্লাহ ১৮/৩, মোস্তাফিজ ৩৩/৩, সাকিব ৩৭/৩)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: এভিন লুইস।
ম্যান অব দ্য সিরিজ: সাকিব আল হাসান।